ঢাকা , রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫ , ৩০ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ই-পেপার

নির্বাচন বিষয়ে সরকারের কাছে জানতে চাইবে বিএনপি

আপলোড সময় : ০৯-০৪-২০২৫ ০১:২২:৪৪ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ০৯-০৪-২০২৫ ০১:২২:৪৪ অপরাহ্ন
নির্বাচন বিষয়ে সরকারের কাছে জানতে চাইবে বিএনপি
বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চায়। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরকারের প্রকৃত মনোভাব জানতে আগ্রহী দলটি। এবিষয়ে দলটির পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাতের জন্য সময় চাওয়া হয়েছে।

গত সোমবার (৭ এপ্রিল) রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য গতকাল মঙ্গলবার সময় চাওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রটি জানিয়েছে, গত সোমবার বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্ষদ জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় দলের পক্ষ থেকে শিগগিরই প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের সিদ্ধান্ত হয় এবং উপদেষ্টার কার্যালয় ইতিবাচক সাড়া দিলে দলের প্রতিনিধিদল সাক্ষাৎ করবে।

এবিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চেয়েছি। তিনি কখন সময় দেন তার ওপর নির্ভর করবে সাক্ষাৎ। আমরা মহাসচিবকে (মির্জা ফখরুল) নিয়েই দেখা করতে চাই।’

উল্লেখ্য, বিএনিপ মহাসচিব এই মুহূর্তে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন, তবে এ মাসের মাঝামাঝি তার ফেরার কথা রয়েছে।

বিএনপির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা এর আগে বিভিন্ন সময়ে দলীয় ও জাতীয় বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তবে এবার দলের পক্ষ থেকে সাক্ষাতের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেটি একটু ভিন্ন। বিএনপি যে এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন চায়, সেটা প্রধান উপদেষ্টাকে সরাসরি বলবে।

মূলত নির্বাচন নিয়ে সরকারের মনোভাব কী,কবে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে জানা–বোঝার চেষ্টা করবেন বিএনপির নেতারা।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর আমাদের আস্থা আছে। আমরা মনে করি, এ বছরের ডিসেম্বরেই নির্বাচন হবে। বিএনপি সেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে, অন্যান্য দলও নিচ্ছে। কোনো কোনো দল তো মনোনয়ন দিয়ে দিয়েছে, মাঠেও নেমে গেছে। দেশের ও জনগণের স্বার্থে রাজনীতিতে যখন যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন, বিএনপি সে সিদ্ধান্ত নেবে। বিএনপি তো নির্বাচনের জন্যই এত যুদ্ধ করেছে, অনেক নেতা–কর্মী জীবন দিয়েছেন, গুম হয়েছেন, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।’

উল্লেখ্য, গত বছর ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই বিএনপি নির্বাচন চেয়ে আসছে। দলটি ভোটকেন্দ্রিক জরুরি সংস্কার শেষে দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের দাবি করছে। এ ক্ষেত্রে গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি দলের অবস্থানকে কিছুটা প্রতিবন্ধকতা বলে মনে করছেন বিএনপির নেতাদের অনেকে। এই দলগুলো প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করে তারপর নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলছে। এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানামুখী আলোচনা চলছে।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, ‘আজ হোক কাল হোক, নির্বাচন তো হতেই হবে। তবে নানা কিছুর মধ্যে নির্বাচন যে কবে হবে, তা আমার কাছে এখনো স্পষ্ট নয়।’

যদিও এরই মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের সম্ভাব্য সময়সীমা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, এ বছরের শেষ থেকে আগামী বছরের প্রথমার্ধে ভোট নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। গত মার্চ মাসে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ঢাকা সফরে এলে প্রধান উপদেষ্টা তাঁর সরকারের বিভিন্ন রকম সংস্কারের উদ্যোগ এবং আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন। তখন জাতিসংঘের মহাসচিবকে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যদি ‘সংক্ষিপ্ত সংস্কার প্যাকেজ’ নিয়ে একমত হয়, তবে নির্বাচন ডিসেম্বরেই হতে পারে। তবে তারা যদি ‘বৃহৎ সংস্কার প্যাকেজ’ গ্রহণ করে, তাহলে নির্বাচন আগামী বছরের জুনে অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান উপদেষ্টার এমন বক্তব্যকে অস্পষ্ট মনে করছে বিএনপি। সে কারণেই শিগগিরই তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চান বিএনপির নেতারা।

বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, সরকারের মনোভাব বুঝতে চলতি এপ্রিল মাসটা দেখবে বিএনপি। এর মধ্যে নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণার বিষয়ে সরকারের দিক থেকে ইতিবাচক অগ্রগতি না দেখলে দলটি ‘ভোটাধিকার’ প্রশ্নে সারা দেশে কর্মসূচি শুরু করবে। এর সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোকেও সক্রিয় করা হবে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘শুধু বিএনপি নয়, দেশের মানুষের ধারণা একটি গণতান্ত্রিক এবং নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার দরকার। বিএনপি একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য ১৫ বছর ধরে আন্দোলন করছে। যার ফলে বিগত সরকারের পতন হয়েছে। কিন্তু সেই প্রত্যাশিত নির্বাচন এখনো হয়নি। এখন যদি আমরা যথাসময়ে নির্বাচনের রোডম্যাপ না পাই, তাহলে আন্দোলন ছাড়া তো আর কোনো রাস্তা খোলা নেই।’

সোমবার অনুষ্ঠিত বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির বৈঠকে একাধিক নেতা বলেন, বিএনপি যেহেতু এই সরকারকে নানাভাবে সহযোগিতা করছে এবং আগামীতেও করবে, সে কারণে নির্বাচনী রোডম্যাপ ইস্যুতে তারা বড় ধরনের কোনো কর্মসূচিতে যেতে চান না।

বিএনপির নীতিনির্ধারকদের প্রত্যাশা, অন্তর্বর্তী সরকার দেশের বাস্তবতা, রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বৈশ্বিক চাওয়া– এসব বিবেচনায় নিয়ে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করবে। দলটি মনে করে, দ্রুত নির্বাচন হলে দেশে বিদ্যমান নানা সংকট ধীরে ধীরে কেটে যাবে এবং দেশে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। এটি দেশের অর্থনীতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

নিউজটি আপডেট করেছেন : mainadmin

কমেন্ট বক্স

প্রতিবেদকের তথ্য

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ